About Book:
যারা কমিক্স পড়ে নিয়মিত, তাদের কাছে খুব পরিচিত একটি নাম টিনটিন, The Adventure of Tintin. বড় গল্প আকারে প্রতিটি ৬২ পেজের এক গল্পের মূল ফরাসি ভাষার এই কমিক্স সিরিজ সম্ভবত পৃথিবীর সবচেয়ে জনপ্রিয় কমিক্স। ৯৩ বছর আগে ১০ই জানুয়ারি বেলজিয়ামের কার্টুনিস্ট জর্জ রেমি হার্জ( আর্জ) ফরাসি একটি পত্রিকায় ফরাসি ভাষায় এই কমিক্স প্রথম ধারাবাহিক ভাবে শুরু করে। ফরাসি ভাষায় যার নাম ত্যাত্যা যা অন্যান্য ভাষায় টিনটিন নামে পরিচিত হয়। ৫০ এরও অধিক ভাষায় এই কমিক্স অনুদিত হয়। বাংলায় অনুবাদ করেছে কোলকাতার আনন্দ প্রকাশনা সংস্থা। টিনটিন ও তার সঙ্গী কুকুর স্নোয়ি, পরে আরও যোগ হয়ে ক্যাপ্টেন হ্যাডক, প্রফেসর ক্যালকুলাস, গোয়েন্দা জমজ ভ্রাতৃদ্বয় রনসন ও জনসন নিয়মিত হয়। এছাড়া প্রতিটি চরিত্র একটি ভিন্ন স্বাদের মাত্রা নিয়ে উপস্থিত হয়। এই কমিক্সের প্রতিটি বিষয় এতো সূক্ষ্মভাবে দেখা হয় যে শেষের দিকের ফ্লাইট ৭৪৭ লিখতে ও একে সম্পূর্ণ করতে ৭বছর চলে যায়। ১৯৮৩ তে হার্জ পৃথিবীর মায়া ত্যাগ করেন। কিন্তু তার টিনটিন এখনও মানুষের কাছে সমান জনপ্রিয়।
ফেলুদার একটা উক্তি আছে কোন একটা গল্পে টিনটিন কে নিয়ে, সেটা হলো কমিক্স কে তেমন আমলে না নেয়া ফেলুদা তোপসের কাছ থেকে একটা টনটিন থেকে নেয়া জ্ঞানের কথা শুনে তাকে বলছে এমন - যাক আজকাল কমিক্স টমিক্সেও কিছু শেখার কিছু থাকে দেখছি।
হ্যা এই কমিক্সে সূক্ষ্মভাবে বেশ জ্ঞানের তথ্য থাকে। টিনটিনের চাঁদে অভিযান বইটি যখন লেখা হয় তখনও মানুষ চাঁদে পা রাখে নি। কিন্তু সেখানে মধ্যাকর্ষন সহ বৈজ্ঞানিক তথ্যগুলো সঠিক রাখার চেষ্টা হয়েছে। লোহিত সাগরে উড়ুক্কু মাছ এনেছে, মরুভূমির মরীচিকা তথ্যগুলো এই কমিক্স গুলোতে দেখা যায়। মোদ্দাকথায়, টিনটিন বিভিন্ন স্থানে অভিযানে যায় আর সেখানের অনন্য উপাদান গুলোকে লেখক হার্জ হিউমার দিয়ে তুলে আনতে সুযোগ ছাড়েন না। তাই উড়ুক্কু মাছ ক্যাপ্টেন হ্যাডকের মুখে এসে কিভাবে উড়ে এসে হাস্যকর ভাবে আঘাত করে, চাঁদে দৌড়াতে গিয়ে মধ্যাকর্ষন কম থাকায় হাস্যকরভাবে অনেক উপরে উঠে যাওয়া; মরুভুমিতে জনসন ও রনসনের মরীচিকায় গোসল করতে গিয়ে নাজেহাল হওয়া দেখা যায় তার বইয়ে এবং নির্মল হাসিতে ফেটে পরে পাঠকরা। পাশাপাশি জ্ঞানটাও জেনে নেয়া হয়। আবার টিনটিনের ভেতর কোমল হৃদয় দিয়ে মানবিকতাও হৃদয় ছুয়ে যায়। দুরন্তপনা আর কোমলতায় পূর্ণ টিনটিন তাই সহজেই মনে যায়গা করে নেয় পাঠক হৃদয়ে।
আমাদের ছোটবেলার একটি রঙিন অধ্যায়ের নাম টিনটিন। স্কুল বন্ধুদের মধ্যে সম্ভবত আমি আর বন্ধু রাশেদ পরিচয় করিয়ে দিয়েছিলাম। অনেকেই তখন এর নিয়মিত পাঠক হয়ে যায়। আমার এলাকাতেও আমার মাধ্যমে অনেকের কাছে টিনটিন কমিক্সের স্বাদ পৌঁছে যায়। কোন কোন এলাকার বোনের আবদার থাকতো আমারে টিনটিনের বিইগুলো কিনে এনে দাও ইত্যাদি।
টিনটিন নিয়ে কার্টুন সিরিজ, নাটক ও সিনেমাও হয়েছে। স্পিলবার্গের মত দুনিয়ার সেরা চলচ্চিত্রকারও টিনটিনকে নিয়ে সিনেমা করেছেন।
তাই টিনটিন কে আলাদা করে দেখতে হয়।
Login to ask a question