চিনা বাদাম একটি জনপ্রিয় সুস্বাদু খাদ্য। একে বিশ্বের অনেক জায়গায় মাঙ্কি নাট বা গোবার নামেও চেনে। এর বৈজ্ঞানিক নাম ARACHIS HYPOGAEA এটি একটি শিম জাতীয় ফসল। এটি যেমন সুস্বাদু তেমনি নানা পুষ্টিগুণে গুণান্বিত।
চিনা বাদামের তেল: বাদামের তেল আমেরিকা, চায়না, দক্ষিণ এশিয়া এবং সাউথ ইস্ট এশিয়ার অনেক দেশেই বেশ জনপ্রিয়। বাদামের তেলে ক্ষতিকারক কোলেস্টেরল থাকেনা। ১০০ গ্রাম তেলে ৮৮৪ ক্যালরি থাকে এবং ফ্যাট থাকে ১৭ গ্রাম। খাদ্যতালিকায় বাদামের তেল ব্যবহার করলে হৃদরোগের ঝুঁকি কমে।
চীনা বাদামের পুষ্টি উপাদান: চিনাবাদাম একটি উচ্চ পুষ্টিমান সম্পন্ন খাদ্য। এতে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে প্রোটিন, সোডিয়াম, আয়রন, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম,ম্যাগনেসিয়াম ,ফাইবার ভিটামিন-এ ,ভিটামিন-বি ,ভিটামিন-সি সহ নানায়াম মাইক্রো পুষ্টি উপাদান।
*বাদাম তেলের উপকারিতা:
১.খারাপ কোলেস্টেরল কমায়: চীনা বাদামে রয়েছে মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট এবং পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট। এছাড়াও ফ্যাটি এসিড রয়েছে যা খারাপ কোলেস্টেরল কমিয়ে থাকে। চিনা বাদামের তেলের রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভালো কোলেস্টেরল।
২. উপকারী চর্বির উৎস: চীনা বাদামে রয়েছে প্রায় ৫০ শতাংশ ফ্যাট। যার মধ্যে মনো আনস্যাচুরেটেড ফ্যাট, পলিআনস্যাচুরেটেড ফ্যাট রয়েছে। এই চর্বিগুলো মানুষের শরীরের জন্য উপকারী।
৩. উচ্চমাত্রার আমিষের উৎস: বাদাম একটি উচ্চমাত্রার আমিষের উৎস। ১০০ গ্রাম বাদামে ২৬ গ্রাম প্রোটিন রয়েছে । আপনারা নিশ্চয় জানেন আমি শরীরের মাংসপেশি গঠনে ভূমিকা রাখে।একজন পূর্ণবয়স্ক নারী প্রতিদিন ৪৬ গ্রাম এবং পুরুষের ৫৬ গ্রাম প্রোটিন প্রয়োজন। এছাড়াও ১৫০০ মিলিগ্রাম থেকে সর্বোচ্চ ২৩০০ মিলিগ্রাম সোডিয়াম গ্রহণ করা উচিত।
৪. পাকস্থলী ক্যান্সার রোধ করে: বাদামে বিদ্যমান পলিফেনোলিক অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট পাকস্থলী ক্যান্সারের ঝুঁকি কমাতে সাহায্য করে।
৫. রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: পুষ্টির অভাবজনিত রোগব্যাধিকে নিয়ন্ত্রণ করে। তাছাড়াও কাশি, সর্দি জ্বর মাথা ব্যাথা ও শারীরিক দুর্বলতা কমাতে ভূমিকা রাখে।
৬. ত্বক উজ্জ্বল করে: বাদামে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফাইবার এবং চর্বি যা নিয়মিত খেলে শরীরের ত্বকের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে। শরীরে জমে থাকা বর্জ্য পদার্থ অপসারণ করে যার কারণে ত্বক উজ্জ্বল হয়।
৭. চুলের পুষ্টি জোগায়: বাদামে বিদ্যমান ভিটামিন ই চুলকে উজ্জ্বল করে এবং মোটা করে।
৮. মস্তিষ্কের ক্ষমতা বৃদ্ধি করে: বাদামে বিদ্যমান বিভিন্ন পুষ্টি উপাদান বিশেষ করে ওমেগা থ্রি ও সিক্স মস্তিষ্ক কে শক্তিশালী হতে সহায়তা করে।
৯. শরীরের ওজন কমায়: বাদামে রয়েছে উচ্চমাত্রার ফ্যাট ও ক্যালরি। বাদাম খেলে পেটে খাদ্য চাহিদা কমে যায়। যার ফলে অতিরিক্ত খাদ্য গ্রহণে অনীহা আসে ফলে খদ্য কম গ্রহন করে এবং ওজন কমে থাকে। তাছাড়াও উপকারী চর্বি থাকায় তা শরীরে মেদ হিসাবে জমতে পারে না।
১০. হৃদরোগের ঝুঁকি কমায়: বাদামে রয়েছে প্রায় ৫০% উপকারী তেল বা চর্বি। এছাড়াও রয়েছে ম্যাগনেসিয়াম, নায়াসিন, কপার, অলীক এবং অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট যা হৃদরোগের ঝুঁকি কমাতে সহায়তা করে।
১১. হাড়ের ক্ষয় রোগ বন্ধ করে: প্রতিদিন খাদ্যতালিকায় বাদাম থাকলে বিদ্যমান ক্যালসিয়াম ও ম্যাগনেসিয়াম হাড়ের ক্ষয় রোধ করে।
১২. উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ পরে: বাদামে প্রচুর পরিমাণে ম্যাগনেসিয়াম থাকে যা উচ্চরক্তচাপ কমাতে সহায়তা করে।
১৪. হজম শক্তি বৃদ্ধি করে: বাদামে প্রচুর পরিমানে ফাইবার থাকে ফলে খাদ্য তালিকা বাদাম থাকলে শরীরের হজম শক্তি বৃদ্ধি করে।
১৫. ব্লাড সুগার নিয়ন্ত্রণ করে: বাদামে ম্যাগনেসিয়াম রক্তের শর্করার মাত্রা কমিয়ে রাখতে। বাদামের ভালো চর্বি শরীরে মেদ জমতে বাধা দেয় যার ফলে অতিরিক্ত শর্করা শরীরে জমতে পারে না। নিয়মিত বাদাম খেলে টাইপ টু ডায়াবেটিস ২৫ থেকে ৩৮ শতাংশ কমে যায়।
*চিনা বাদামের অপকারিতাঃ
• শরীরে এলার্জি হতে পারে: অনেকেরই বাদাম খেলে এলার্জি বাড়তে পারে। সকলকেই বাদামে এলার্জি দেখা নাও যেতে পারে। যাদের বাদামে এলার্জি রয়েছে তারা বাদাম থেকে দূরে থাকবেন।
• শরীরে অতিরিক্ত ক্যালরি যোগ হতে পারে। বাদাম একটি উচ্চ ক্যালরি সমৃদ্ধ খাবার এবং মুখরোচক খাবার। তাই অতিরিক্ত বাদাম খেলে শরীরে ক্যালরির মাত্রা বৃদ্ধি পেতে পারে। বা অন্য খাদ্যের সাথে পরিমাপ করে বাদাম অবশ্যই খেতে হবে।
Login to ask a question